ভারতবর্ষে আদি মানুষ ও প্রস্তরায়ুধ কৃৎকৌশল

ভারতবর্ষে আদি মানুষ ও প্রস্তরায়ুধ কৃৎকৌশল

ভারতবর্ষে আদি মানুষ ও প্রস্তরায়ুধ কৃৎকৌশল


-আফ্রিকার ঘাসজমি আর ঘন অরণ্যে বেড়ে ওঠা হোমো হাবিলিস (অথবা পুরা কালের এক হোমো ইরেকটাস) যে তার পরিবেশের বাধা অতিক্রম করে ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্রাময় জলবায়ুর এলাকায় সুদূর চিন (লং ওপ্পোঃ যেখানে ১৮ লক্ষ ১৯ লক্ষ বছরের পুরনো চোয়ালের জীবাশ্ম তার সঙ্গে ওলডোয়ান হস্তশিল্প পাওয়া গেছে) থেকে স্পেনের (বারাঙ্কো লিয়ন-এ, ১৮ লক্ষ বছর আগের) ছড়িয়ে পরেছিল, মানব প্রজাতির পক্ষে সে ছিল সাফল্যের এক দিক চিহ্ন। দামিনিসি-তে (জর্জিয়া, ককেশাস) ১৭ লক্ষ বছর আগের আর মোজোরেটা-তে (জাভা, ইন্দোনেশিয়া) ১৮ লক্ষ বছর আগের হোমো-ইরেকটাস বলে সনাক্ত করা সমসাময়িককালের অনেক প্রজাতির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। দামিনিসি-তে জীবাশ্বের সঙ্গে ওলডোয়ান হাতিয়ারও ছিল।


এইসব প্রাচীন যুগের অস্ত্রশস্ত্র, হোমো হাবিলিস কিংবা প্রথম দিকের হোমো ইরেকটাসও যেগুলো ব্যবহার করত, তাদের চিহ্ন রয়েছে পাকিস্তানের মাটিতেও। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের পশ্চিমে, পাটওয়ার মালভূমির সোয়ান উপত্যকায় অবস্থিত রিয়াত-এ এগুলো পাওয়া গেছে, প্রাচীনত্বের বিচারে ২০ লক্ষ বছরেরও বেশি পুরনো সেগুলো। একইরকমের হস্তশিল্পের নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পাহাড়ে, সেই পুরনো কালের ছাপ তাদের শরীরেও (১৮লক্ষ বছর কিংবা তারও পুরনো কালের)।


এমনকি খাঁটি হোমো হাবিলিস যদি আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়েও থাকে, তবু প্রাচীন এ পৃথিবীর সর্বত্র যার চিহ্ন প্রভূত মাত্রায় দেখা যায়, সেই হোমো ইরেকটাস সময়ের বিবর্তনে হোমো হাবিলিসকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাচীনতর চিহ্ন গুলো ছাড়াও সে ঢুকে পড়েছিল উত্তর চীনের শীতলাতর অংশেও (ঝৌকুওদিয়ান, ৭ লক্ষ বছর আগে); জাভার ঘন অরণ্য সঙ্কুল দ্বীপেও (ঐ একই সময়ে) তখন সে বসবাস শুরু করেছে। এমনকি তার কাজের হাতিয়ারগুলো যখনো পর্যন্ত প্রধানত অমসৃণ ভাঙাচোরা পাথরের টুকরোর ভেতরের অংশ তার খাঁজকাটা স্তর, সে সময়েও তার শক্তপোক্ত বলবান কাঠামো, মুখের কথার ওপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ আর দীর্ঘাকায় মগজ তাকে অনেক বেশি সুবিধা দিয়েছিল। আগুনকে সে ব্যবহার করতে পারত নানাভাবে; উষ্ণতা পেতে, বন্যজন্তুকে ভয় দেখাতে কিংবা জঙ্গল পরিষ্কার করতে, তবে খুব সম্ভবত তখনো পর্যন্ত মাংস আর হাড় ঝলসে খেতে জানত না।


পাকিস্তানে পাব্বি পাহাড়ে, ঝিলম নদীর তীরে সোয়ান উপত্যকায় পাওয়া গেছে প্রধান স্তরকাটা পাথর (Flaked pebble), যাকে কিনা 'টুকরো করার কাটারি' (Chopper Chopping) বলা হতো সেই রকম হাতিয়ারের বয়স ১০ লক্ষ বছর কি তারও বেশি। হিমাচল প্রদেশের বিপাশা, বনগঙ্গা আর অন্যান্য নদী উপত্যকাতেও একই রকমের হস্তশিল্পের নমুনা পাওয়া গেছে তবে তাদের শরীরে বয়সের স্তরচিহ্ন নেই। এই গোটা এলাকায় ঐ যুগের হোমো ইরেকটাস কোনো জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়নি, কিন্তু একই রকম যন্ত্রপাতি যে ঐ প্রজাতিরই হাতের কাজ এটা প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিত বলে মনে হয়।


হাত কুঠার বা আকিউলিয়ান শিল্প (আফ্রিকাতে ১৪ লক্ষ বছরের আগে ইতিমধ্যেই যেটি প্রচলিত) ৭ লক্ষ ৫ লক্ষ বছর আগের সময়কালে টুকরো করার কাটারির মত হাতিয়ারের সঙ্গে একই সাথে সোয়ান উপত্যকায় দেখা গিয়েছিল। হাতকুঠার সমেত ঐ একই রকম সময়কালের ঐ একইরকম সব হাতিয়ার কাশ্মীরের পহেলগাঁও এর সমতলে পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। এটা হতে পারে যে, ছুঁড়ে মারতে সুবিধা হয় এমন হাত-কুঠার সশস্ত্র, আগুনকে নিজের বশে এনে অনেকটা সুরক্ষিত এই হোমো ইরেকটাস (Scavenger অন্যের মারা মাংস খায় যারা) ফলমূল আর বুনো ঘাসের বীজ সংগ্রহ করে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট প্রাণী শিকারীও হয়ে উঠেছিল।


ভারতবর্ষের বাদবাকি অংশে এই হোমো ইরেকটাস ছড়িয়ে পড়ত একটু সময় লেগেছিল। ভূতাত্ত্বিকরা যাকে মধ্য প্লেস্টোসিন কাল (৭ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে) বলেন, সে সময় প্রকৃতপক্ষে বিস্তার ঘটেছিল। হিমযুগের অত্যন্ত ঠাণ্ডা শুকনো সময়কালে যখন অরণ্য উজাড় হয়েছিল অথবা সীমান্তবর্তী উষ্ণ স্যাঁতস্যাতে দশায় যখন নিবিড় হয়েছিল অরণ্য, তখন এই পরিবেশ তাকে যে কিভাবে বাধা দিয়েছিল নাকি সাহায্য করেছিল, সে কথা এখন বলা সম্ভব নয়। কর্নাটকের হুন্সগি উপত্যকা আর চেন্নাই এর কাছে অবস্থিত আত্তিরামপাক্কাম সমেত দক্ষিণ ভারতের অনেক স্থানে 'প্রাচীন আকিউলিয়ান হাতিয়ার' (তথাকথিত 'মাদ্রাজীশিল্প) অর্থাৎ হাত কুঠার ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটেছিল। U-Th (ইউরেনিয়াম-থেরিয়াম) পদ্ধতিতে কর্ণাটকের স্থানগুলির বয়স বেরিয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর। ওই একই পদ্ধতিতে রাজস্থানের পাওয়া দিদোয়ানায় নিম্নস্তরের প্রাচীন প্রস্তর যুগের হস্ত শিল্পকৃতি ৩ লক্ষ ৯০ হাজার বছরের পুরনো আর মহারাষ্ট্রের আহম্মদনগর জেলায় নাভাসা সামগ্রী ৩ লক্ষ ৫০ হাজারের পুরনো বলে দেখা গেছে।


ছড়িয়ে পড়ার এই প্রক্রিয়া চলার সময়, কালক্রমে আদি হোমো ইরকটাস এর মধ্যে কয়েকটি উপ প্রজাতির বিভক্ত হবার একটি ঝোঁক দেখা গেল। শক্তি তাদের একটু কম হলেও তারা ছিল অনেক বেশি দক্ষ আর সেকারণে এই পাথরের ভাঁজ থেকে আরো ছোট ছোট হাতিয়ার অর্থাৎ 'পরবর্তী আকিউলিয়ান হাতিয়ার' তারা তৈরি করতে পারত। হাতনোরাতে 'নর্মদা করোটি' আবিষ্কৃত হবার সঙ্গে সঙ্গে নর্মদা উপত্যকায় একইরকম হাতিয়ারের ভগ্নাবশেষও পাওয়া গেছে। একটি বিকশিত হোমো ইরেকটাস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এই করোটি অনেক অনেক দূর-অতীতের কথা বলতে পারে; ১৩০০০০ বছরের চেয়েও অনেক আগের কোন সময়ের কথা।

GK Disari

GK Disari- এই ওয়েবসাইটে আপনারা জেনারেল নলেজ, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, সরকারি চাকরির বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার প্রিপারেশন ও সাজেশন দেওয়া হয়। আপনারা যদি একজন সরকারি চাকরির পরীক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে এই ওয়েবসাইটটিকে আপনারা ফলো করুন প্রতিদিনে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও আমাদের দেওয়া সাজেশন গুলি আপনাকে সাফল্যের লক্ষ্যে নিয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন